এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - জীববিজ্ঞান - জীববিজ্ঞান প্রথম পত্র | NCTB BOOK

এপিডার্মাল বা ত্বকীয় টিস্যুতন্ত্র (Epidermal tissue system)

যে টিস্যুতন্ত্র উদ্ভিদ অঙ্গের প্রাথমিক গঠন সৃষ্টিতে অংশ নেয় এবং উদ্ভিদ অঙ্গের বহিরাবরণ সৃষ্টি করে, ভাষ এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র বলে। কাণ্ড, পাতা ও ফুলের বিভিন্ন অংশের ত্বক, বিটপের প্রোটোডার্ম থেকে এবং মূলের মূলম আবৃত অংশের শীর্ষ ভাজক টিস্যুর একটি কোষস্তর থেকে এর উৎপত্তি হয়। এক কথায় এপিডার্মাল টিস্যুর টাপা প্রাইমারি শীর্ষক ভাজক টিস্যু থেকে। এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্র উদ্ভিদের ত্বক, ত্বকীয় উপবৃদ্ধি এবং রক্ত নিয়ে গঠিত। 

এপিডার্মিস (epidermis) বা ত্বক এপিডার্মাল টিস্যুতন্ত্রের যে অংশ উদ্ভিদ অঙ্গের অর্থাৎ মূল, কাণ্ড, পাতা, ফুল, ফল ও বীজের বহির্দেশে অবস্থানকা অঙ্গগুলোর বহিরাবরণ নির্মাণ করে তাকে এপিডার্মিস বা ত্বক বলে।

ত্বক বিভিন্ন উদ্ভিদ অঙ্গে এক অবিচ্ছিন্ন স্তর গঠন করে। স্তরটি সাধারণত একটিমাত্র প্যারেনকাইমা কোষ নির্মিত হয়, তবে অশ্বত্ব, পাকুর, রাবার, খেজুর, বট প্রভৃতি গাছের পাতায় এবং মরুজ উদ্ভিদের মূলে কোষস্তরটি পুনরা বিভক্ত হয়ে ২-৩টি স্তরে পরিণত হয়। করবী গাছের পাতায় তিনসারি কোষের ত্বক দেখা যায়। ত্বকের কোষগুলো প্যারেনকাইমা জাতীয় এবং নলাকার বা ডিম্বাকার। কোষগুলো ঘনসন্নিবিষ্ট হওয়ায় আন্তঃকোষীয় ফাঁক নেই। কোম্পা সেলুলোজ নির্মিত এবং প্রাচীরের ধার ঘেঁষে সামান্য পরিমাণ সাইটোপ্লাজম থাকে। অভ্যন্তরে রয়েছে একটি বড় গা ও বর্ণহীন প্লাস্টিড (লিউকোপ্লাস্ট)। সাধারণত রক্ষী কোষ ব্যতীত অন্য কোনো কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে না। তা জলজ উদ্ভিদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যায়। ফুলের পাপড়ি ও ফলের ত্বকে অ্যান্থোসায়ানিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকে। অনেক সময় কোষের সাইটোপ্লাজমে মিউসিলেজ, ট্যানিন, বিভিন্ন কেলাস ও বর্জ্য পদার্থ সঞ্চিত থাকে। কোষপ্রাচী বাইরে পুরু বা পাতলা কিউটিন, লিগনিন, সুবেরিন, মোম প্রভৃতির প্রলেপ থাকে। গম, ভুটা, আখ ইত্যাদি গাছের পরা ত্বকে বুলিফর্ম (বৃহদাকৃতির ত্বকীয় কোষ) কোষ থাকে। কিউটিনযুক্ত কোষপ্রাচীরকে কিউটিকল (cuticle) বলে।
এটি শীর্ষ ভাজক টিস্যুর একটি কোষস্তর থেকে সৃষ্টি হয়; এটি পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে কোষপ্রাচীরে কিউটিকল প্রভৃতির প্রলেপও থাকে না। তাই মূলের বহিরাবরণকে এপিব্লেমা (epiblema) এবং অন্যান্য অঙ্গের বহিরাবরণকে এপিডার্মিস বলে। এবিব্লেমার বিভিন্ন কোষ থেকে এককোষী মূলরোম সৃষ্টি হয়।

কাজ : 
( i)এপিডার্মিস বা ত্বক উদ্ভিদকে, বিশেষ করে উদ্ভিদের অভ্যন্তরীণ টিস্যুকে বাইরের আঘাত থেকে ও প্রতিকূল অবস্থা হতে রক্ষা করে।

(ii) রোমযুক্ত ত্বক, বিশেষ করে বিষাক্ত গ্রন্থিওয়ালা রোমযুক্ত ত্বক বিভিন্ন আক্রমণ হতে উদ্ভিদকে রক্ষা করে থাকে।

(iii) অনেক সময় ত্বক কর্তক পানির অপচয় বন্ধ করে থাকে।

(iv)মোমের আস্তরণ পড়া ত্বক ছত্রাকের আক্রমণ হতে অভ্যন্তরীণ টিস্যুকে রক্ষা করতে পারে।

(v) ত্বক (স্টোম্যাটা= পত্রবন্ধ) দিয়ে উদ্ভিদ অভ্যন্তর ও বাইরের পরিবেশের মধ্যে বিভিন্ন গ্যাসের আদান-প্রদান করে।যুক্ত ত্বক খাদ্য তৈরি করে।

(vii) মূলরোম পানি ও খনিজ লবণ শোষণ করে।

(viii) বুলিফর্ম কোষ ৮% সময় করে এবং পাতার প্রসারণ ও বিকাশে সহায়তা করে।

(ix) ত্বককোষ প্রয়োজনে বিভাজিত হতে পারে এবং সারিয়ে তোলে।

 এপিডার্মাল এপিডার্মিস অনেক জায়গায় একধরনের সুনির্দিষ্ট ও সুগঠিত রক্তপথে বিদীর্ণ বা উন্মুক্ত থাকে । এসব বন্ধ বিশেষ করে পাতাতে নিয়মিত ও অসংখ্য থাকে। বস্তুগুলো দুরকম, যথা-১, পত্ররন্ধ্র(stomata) 
২. পানিরন্ধ্র (hydathode বা stomata) নিচে এদের অবস্থান কাজের বর্ণনা দেয়া হলো।

পত্ররন্ধ্র বা স্টোমাটাঃ  সাধারণত দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের বিষমষ্ঠ পাতার নিচের ত্বকে বেশি থাকে। অর্ধপূর্ণ পাতার উভয় ত্বকেই কিছু সংখ্যক পরবদ্ধ ত্বকের তল থেকে সামান্য ভেতরের দিকে অবস্থান করে। সাধারণত উদ্ভিদের পাতায় এবং জলজ উদ্ভিদের ভাসমান পাতার উপরের ত্বকে পরজে থাকে। পানিতে নিমজ্জিত পাতায় বা মূলে পত্রবন্ত থাকে না। মরুজ গাছের পাতায় পররক্ত বহিঃত্বকের গভীরে অবস্থান করে। পত্ররন্ধে মাধুবীক্ষণিক । প্রত্যেক পরবস্তু দুটি অর্ধচন্দ্রাকার রক্ষীকোষ নিয়ে গঠিত। কোষটির বিশেষ ভঙ্গিতে অবস্থানের কারণে হাতখানে বন্ধের সৃষ্টি হয়। রক্ষীকোষে ঘন সাইটোপ্লাজম, একটি সুনির্দিষ্ট নিউক্লিয়াস ও কতকগুলো ক্লোরোপ্লাস্ট রয়েছে । কেনপক্ষে বস্তু ও রক্ষীকোষমুটি একত্রে মিলে পরবন্ধ (stom, বহুবচনে) গঠন করে। রন্ধের নিচে একটি বায়ুপূর্ণ থাকার থাকে। বন্ধুকে ঘিরে থাকা রক্ষীকোষের অবতল অংশ অন্য অংশ অপেক্ষা বেশি স্কুল। রক্ষীকোষকে ২-৪টি বহিঃত্বকীয় কোষ বেষ্টন করে রাখে। রক্ষীকোষের কর্মকাণ্ডে রন্ধ্র খোলে ও বন্ধ হয়। কোষের কর্মকান্ড পরিচালিত রাস্ফীতিজনিত চাপের প্রভাবে। এ প্রভাবের কারণে পত্ররন্ধ্র দিনে খোলা ও রাতে বন্ধ থাকে।

কাজ :

(i) শ্বসনের সময় রক্তপথে বায়ু (বাতাসের O2) প্রবেশ করে এবং CO2 নির্গত হয়।

(ii) সালোকসংশ্লেষণের সময় বাতাসের CO, বৃক্ষপথে প্রবেশ করে এবং উৎপন্ন O2 বেরিয়ে যায়।

(iii) মাটি থেকে শোষিত অতিরিক্ত পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বাষ্পাকারে বের করে দেয়।

(iv) রক্ষীকোষের ক্লোরোপ্লাস্ট খাদ্য প্রস্তুত করে।

(v) রক্ষীকোষ রক্তের মালা ও বন্ধ হওয়া নিয়ন্ত্রণ করে।

পানিরন্ধ্র বা হাইডাথোড (Hydathode) হাইডাথোড এক বিশেষ ধরনের পানি নির্মোচন অঙ্গ। টমেটো, কচু প্রভৃতি গাছের পাতার কিনারায় গুমোট গরমের দিনে পানির ফোঁটার সারি দেখে এ অঙ্গের অবস্থান বোঝা যায়। বিশেষ পরিস্থিতিতে উদ্ভিদদেহ থেকে হাইডাথোডের মাধ্যমে পানি পরিত্যক্ত হয় বলে হাইড্রাথোডকে পানিবন্ধ বা পানি- নিবন্ধে বলে। হাইডাগোপ দিয়ে তরল পানি বের হয়ে যাওয়াকে গাটেশন (guttetion) বলে। হাইভাথোডের শীর্ষে রক্ষীকোষে আবদ্ধ একটি রক্ত থাকে। রন্ধের নিচে রয়েছে একটি গহ্বর। গহ্বরের নিচে গুলো অসংলগ্ন কোষ থাকে, এগুলোকে এপিথেম বলে। মূল চাপে পানি ট্রাকিভের শেষপ্রান্ত দিয়ে এপিখেমের মাধ্যমে বিন্দু আকারে বন্ধমুখে জমা হয়। ভোরে এসব বিন্দু দেখা যায়। অন্য সময় পানি দ্রুত বাষ্পায়িত হয় বলে তা দেখা যায় ।

এপিডার্মাল উপাঙ্গসমূহ (Epidermeal appendages) ত্বকের কিছু কোষ থেকে বাইরের দিকে এককোষী বা বহুকোষী নানা আকৃতি ও প্রকৃতির উপবৃদ্ধি উদগত এগুলোকে এপিডার্মাল উপাঙ্গ বা ট্রাইকোম (trichome) বলে । ট্রাইকোম নিম্নোক্ত বিভিন্ন ধরনের হতে পারে।

i. রোম (Hairs): রোম এককোষী বা বহুকোষী। এরা আবার শাখানিত বা অশাখ হতে পারে। মূলের রোম সর্বদাই এককোষী। মূলরোমের মাধ্যমে উদ্ভিদ মাটি থেকে পানি ও খনিজ লবণ পরিশোষণ করে। কাজের বহিত্বকের কোন কোন কোষ ল হ কারোম গঠন করে। কাওরোম এককোষী বা বহুকোষী, শাখাহীন বা শাখান্বিত হতে পারে। একবীজপত্রী উদ্ভিদের কাছে কারোম নেই। কার্পাস তুলার বীজবুক উদ্ভুত রোমগুলো আঁশের মতো এবং তুলার জন্তু গঠন করে।

ii . গ্রন্থিরোম বা কোলেটারস (Glandular hairs or Collcters) : এগুলো বহুকোষী এবং বৃত্তক। গ্রন্থিকোষ এক ধরনের চটচটে আঠালো পদার্থে পূর্ণ থাকে। উদ্ভিদের পরিপাক গ্রন্থি এ ধরনের ট্রাইকোম বৈশিষ্ট্যযুক্ত।

iii. দংশনরোম (Stinging hairs) এগুলো এককোষী, লম্বা, সূঁচালো ও এক ধরনের বিষাক্ত রসে পূর্ণ ট্রাইকোম প্রাণিদেহের সংস্পর্শে কোষের সূঁচালো ডগা ভেঙ্গে গিয়ে বিষাক্ত রস মুক্ত হয়, ফলে চামড়ায় তীব্র জ্বালা ধরায়। কিছু আলকুশি প্রভৃতি উদ্ভিদে এ রোম পাওয়া যায়।

iv. পানিথলি (Water bladder) বরফ উরিস নামে পরিচিতি Mesenbrayanthemum crystallin (মেসেমরায়াছিলাম ক্রিস্টালিনাম )- এর ত্বককোষ স্ফীত খালির আকার ধারণ করে এবং বিপুল পরিমাণ পানি ধরে রাখে। শীতকালে এ পানি বরফে পরিণত হয়।

v. শঙ্ক (Scales) পাতলা ঝিল্লি সদৃশ বিশেষ ধরণের রোমকে শল্ক বলে। এরা প্রস্বেদনের হার কমায়।

Content added By
এপিডার্মিস
এক্সােডার্মিস
এপিব্লেমা
এন্ডোডার্মিস
প্যারেনকাইমা
কোলেনকাইমা
রেনকাইমা
কোনটিই নয়
Promotion